একই এলাকায় শতাধিক ফিসারির ওপর মুরগির শতাধিক টং খামারের ফলে রাসায়নিক দূষণ


admin প্রকাশের সময় : অগাস্ট ২৬, ২০২২, ১:২৩ অপরাহ্ন /
একই এলাকায় শতাধিক ফিসারির ওপর মুরগির শতাধিক টং খামারের ফলে রাসায়নিক দূষণ

একই এলাকায় শতাধিক
ফিসারির ওপর মুরগির
শতাধিক টং খামারের
ফলে রাসায়নিক দূষণ

# মোস্তফা কামাল :-

বহুদিন ধরেই মুরগির খামারে ভ্যাকসিন, রাসায়নিক ওষুধ আর ক্ষতিকর পোল্ট্রি ফিড ব্যবহার এবং জনস্বাস্থ্যে এর বিরূপ প্রভাব নিয়ে আলোচনা চলছে। ক্ষতিকর রাসায়নিকের কারণে খামারের মুরগির মাংসের মাধ্যমে মানবদেহে ক্যান্সার আর কিডনী জলিটতাসহ নানা রোগের উপসর্গ তৈরি নিয়েও আলোচনা রয়েছে। এসব নিয়ে গবেষণাও চলছে। বাজারের ওষুধ এবং পোল্ট্রি ফিড নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষাও হচ্ছে। বিভিন্ন সময় ক্ষতিকর ব্র্যান্ডের ওষুধ এবং পোল্ট্রি ফিডের ওপর সংশ্লিষ্ট বিভাগের মাধ্যমে নিষেধাজ্ঞাও দেয়া হচ্ছে। অন্যদিকে মৎস্য খামারে মাছ চাষের ক্ষেত্রেও তাই। তবে এসব ক্ষতির মাত্রা দিন দিন কমে আসছে বলেও জানা যায়।
বহুদিন ধরেই পোল্ট্রি খামারের টনের টন মুরগির বিষ্ঠা মাছের খামারে মাছের খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন মাছের খামারে স্থানীয় পোল্ট্রি খামারের বিষ্ঠার পাশাপাশি গাজীপুর এলাকা থেকেও বস্তার বস্তা বিষ্ঠা মৎস্য খামারিরা নিয়ে আসেন। এগুলি খামারের পাশে স্তুপ করে দিনের পর দিন ফেলে রাখেন। এর ফলে একদিকে যেমন পরিবেশ দূষণ হচ্ছে, এর পাশ দিয়ে উৎকট দুর্গন্ধের কারণে রাস্তায় মানুষ চলাচল করতেও কষ্ট হচ্ছে। এসব বিষ্ঠা মাছের খামারে খাবার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। আবার অনেক মৎস্য খামারি নিজেরাই মাছের খামারের ওপর টং খামার বানিয়ে তাতে শত শত মুরগি লালন করছেন। এসব খামারের মুরগির বিষ্ঠা মাছের খাবার হিসেবে সরাসরি নীচের পানিতে গিয়ে পড়ছে।
প্রাণী সম্পদ বিভাগ এবং মৎস্য বিভাগের পক্ষ থেকে খামারের মাছ এবং মুরগির ফিড আর ওষুধ প্রয়োগ নিয়ে খামারিদের সচেতন করার চেষ্টা করা হলেও তা সবসময় কাজে আসছে না। মাছের খামারের ওপর যেন কেউ মুরগির টং খামার তৈরি না করেন, মাছের খাবার হিসেবে যেন মুরগির বিষ্ঠা ব্যবহার না করেন, এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিয়েও পুরো সফল হওয়া যাচ্ছে না। অনেক এলাকায় মাছের খামারের ওপর থেকে মুরগির টং খামার সরিয়ে নিলেও বহু এলাকায় তা সম্ভব হচ্ছে না। জেলার মধ্যে সদর উপজেলার দানাপাটুলি ইউনিয়নে কয়েকটি বিল এবং কয়েকটি বড় জলাশয় নিয়ে সবচেয়ে বড় মৎস্য খামার এলাকা গড়ে উঠেছে। এখানে পুরুইল বিল, সেলুইন বিল, বাবুদ্দিয়া বিল, ছাহি ডোবা, পাগলার বাইদ, গাজরি বাইদ, কালির বাইদসহ বিভিন্ন ছোটবড় বিল এবং জলাশয় রয়েছে। এখানে এক সঙ্গে শতাধিক মৎস্য খামার গড়ে উঠেছে। আর এসব মৎস্য খামারের পানির ওপর গড়ে উঠেছে মুরগির শতাধিক টং খামার। আর এই এলাকাতেই সবচেয়ে বেশি মুরগির বিষ্ঠা ব্যবহৃত হচ্ছে। নিজেদের খামারের মুরগির বিষ্ঠার পাশাপাশি গাজীপুর এলাকা থেকেও টনের টন বিষ্ঠা নিয়ে আসা হচ্ছে। মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে বার বার এসব বন্ধের উদ্যোগ নেয়া হলেও প্রভাবশালী ব্যক্তি ও শক্তিশালী সিন্ডিকেটের কারণে উদ্যোগ সফল হচ্ছে না বলে জানা গেছে।
জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন, জেলায় বেসরকারী খাতে ব্রয়লার ও লেয়ারসহ বিভিন্ন জাতের প্রায় সাড়ে ৩ হাজার মুরগির খামার রয়েছে। মৎস্য খামারের ওপর মুরগির খামার করার ফলে মুরগির বিষ্ঠা সরাসরি পানিতে পড়ে পানি দূষিত হয়ে যায়। পানিতে এমোনিয়া গ্যাসের পরিমাণ বেড়ে যায়। এতে মাছের মরক দেখা দেয়। এছাড়া মুরগির ক্ষেত্রে অনেক সময় স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করা হয়। আর এসব মুরগির বিষ্ঠা দিয়ে মাছের আবাদ করা হয়। কাজেই এসব খামারের মাছ খেলে মানবদেহের ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। তবে এখন মুরগির খাবার এবং ওষুধ পরীক্ষা করা হচ্ছে। বিএসটিআই’র অনুমোদন ছাড়া কোন ওষুধ প্রয়োগ করতে নিষেধ করা হচ্ছে। মাছের খামারের ওপর সরাসরি মুরগির খামার না করার জন্য খামারিদের বলা হচ্ছে। কিন্তু অনেকেই এসব বিধিনিষেধ মানতে চান না বলে প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা জানিয়েছেন। এদিকে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রিপন কুমার পাল জানিয়েছেন, মাছের খামারের ওপর নির্মিত মুরগির খামার থেকে মুরগির বিষ্ঠা সরাসরি পানিতে পড়লে সেগুলি মাছ খাবার হিসেবে গ্রহণ করে। এতে মাছে এক ধরনের দুর্গন্ধ হয়। পানিও নষ্ট হয়ে যায়। এসব মাছ মানুষের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত নয়। এছাড়া মুরগির খামারে যেসব ভেকসিন বা ওষুধ ব্যবহার করা হয়, এগুলির ক্ষতিকর প্রভাবও মাছের মাধ্যমে মানবদেহে পড়ে। খামারিদের সচেতন করার জন্য তিনি সদর উপজেলার দানাপাটুলি এলাকায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে খামারিদের সঙ্গে কয়েকটি সভা করেছেন। মাছের খামারের ওপর মুরগির খামার না করার জন্য আহবান জানিয়েছেন। কিন্তু খামারিরা এসব কর্ণপাত করতে চান না। বাজারে মাছের খাবারের বেশি দামের যুক্তি দেখিয়ে তারা মুরগির বিষ্ঠা প্রয়োগ করেন। এখন ফিসারিতে গোবর প্রয়োগেও নিষেধ করা হয় বলে তিনি জানান। তবে মৎস্য বিভাগের পক্ষ থেকে নিরাপদ মাছ চাষ নিয়ে চেষ্টা অব্যাহত আছে। মাছের ৩০ ধরনের খাবার ল্যাবে পরীক্ষা করা হয় যেন মাছ এবং মানবদেহের ক্ষতি না হয়। তবে সবাই মিলে এ ব্যাপারে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে বলে তিনি মনে করেন।