কটিয়াদীতে ৫শ’ বছরের বিরল এক ঢাকের হাট


admin প্রকাশের সময় : সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২২, ১:২০ অপরাহ্ন /
কটিয়াদীতে ৫শ’ বছরের বিরল এক ঢাকের হাট

# মোস্তফা কামাল :-

প্রবাদে আছে ‘ব্যঞ্জনে নুন আর পানে চুন’। পূজার ঢাকও তেমনই। শারদীয় দুর্গোৎসব মানেই ঢাকের তাল। ঢাকের তালে হবে উলুধ্বনি, ঢাকের তালে হবে ধুনুচি নাচ। বাদক দল ছাড়া দুর্গোৎসব যেন কল্পনাও করা যায় না। আর ঢাকের সঙ্গে কর্তাল, খঞ্জনি, সাঁনাই, বাঁশি, কাসর, জিপসী, আর মন্দিরা তো থাকবেই। অর্থাৎ ঢাকসহ বাদক দল দুর্গোৎসবের অন্যতম অনুষঙ্গ। কোন মণ্ডপে কত দক্ষ বাদক দল রয়েছে, এটিও পূজার একটি অন্যতম আকর্ষণ হিসেবে কাজ করে এবং মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে। ষষ্ঠী থেকে বিজয়া দশমী পর্যন্তই চলে বাদক দলের মনোমুগ্ধকর বাদন। এমনকি, বিজয়া দশমীর দিন বিকালে কোন কোন উপজেলা সদরে উপজেলার সকল মণ্ডপের বাদক দলের মধ্যে আকর্ষণীয় প্রতিযোগিতারও আয়োজন করা হয়। সেরা বাদক দলকে পুরস্কৃতও করা হয়।
কিশোরগঞ্জে এবার পূজা হচ্ছে ৪২৮টি মণ্ডপে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বাদক দল এসে এ জেলার পূজাগুলোকে নান্দনিক করে তোলে। দুর্গা পূজা উপলক্ষে ঢাকের হাটও বসে। বিশেষ করে কটিয়াদী সদরের পুরান বাজারে আনুমানিক ৫শ’ বছর ধরে বসছে ঐতিহ্যবাহী জমজমাট ঢাকের হাট।এখানে মুন্সিগঞ্জ, ঢাকা, গাজীপুর, সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, নরসিংদী, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বাদক দল এসে মন্দির বা মণ্ডপ কমিটিগুলোর মনযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করে। জেলার বিভিন্ন এলাকার মন্দির বা মণ্ডপের কর্মকর্তারা সেখানে গিয়ে বাদক দলের প্রতিযোগিতা দেখে পছন্দের একটি দলকে দরদাম ঠিক করে বাছাই করে নিয়ে যান। এসব দেখার জন্যও শত শত কৌতুহলি মানুষের ভিড় জমে যায়। মান ভেদে ১০ হাজার টাকা থেকে লাখ টাকায়ও একেকটি দল ভাড়ায় যায় বলে জানা গেছে।
কথিত আছে, ষোড়শ শতকের দিকে কটিয়াদী উপজেলার সামন্ত রাজা নবরঙ্গ রায় তার চারিপাড়া এলাকার রাজপ্রাসাদে দুর্গা পূজার সূচনা করেন। আর পূজার জন্য বাদক দল বাছাই করতে বিক্রমপুর পরগনায় খবর পাঠান। সেখান থেকে বহু বাদক আসতো রাজার দরবারে। সেখানে একেকটি দলের বাদন পরখ করে পছন্দের দলটি পূজার জন্য রেখে দিতেন। তখন থেকেই কটিয়াদীতে ঢাকের হাটের প্রচলন শুরু হয়েছে বলে জনশ্রুতি রয়েছে। বরাবরের মত এবারও বসেছে জমজমাট ঢাকের হাট।