হোসেনপুরে ভবন মালিকের অবহেলায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে চার আঙ্গুল কাটা গেলো শিশুর, ইউএনও’র কাছে দরখাস্ত


admin প্রকাশের সময় : অক্টোবর ৯, ২০২২, ৪:০৭ অপরাহ্ন /
হোসেনপুরে ভবন মালিকের অবহেলায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে চার আঙ্গুল কাটা গেলো শিশুর, ইউএনও’র কাছে দরখাস্ত

# মোস্তফা কামাল :-

হোসেনপুরের গোবিন্দপুর এলাকায় এক ভবন মালিকের অবহেলায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে দরিদ্র পরিবারের এক শিশুর চারটি আঙ্গুল কাটা গেছে। শিশুটি প্রায় দুই মাস ধরে রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ণ এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট হাসপতালে চিকিৎসাধীন। ভবন মালিক আজিজুল হক চিকিৎসা বাবদ কয়েক কিস্তিতে মাত্র ১৬ হাজার টাকা দিয়েছেন ভিকটিমের পরিবারকে। কিন্তু পানের বরজের শ্রমিকের মেয়ের চিকিৎসার বাদবাকি খরচ চালাতে হচ্ছে ঋণ করে। এমতাবস্থায় শিশুটির মামা মোহাম্মদ আলী অবশেষে গত শুক্রবার হোসেনপুরের উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে এ ব্যাপারে সুবিচার দাবি করে একটি লিখিত আবেদন করেছেন। নির্বাহী অফিসার রাবেয়া পারভেজ জানিয়েছেন, ওই ভবনের বারান্দা তৈরি করা হয়েছে রাস্তার জায়গার ওপর, আর ভবনটি তৈরি করা হয়েছে পল্লীবিদ্যুতের খুঁটি ঘেঁষে। যে কারণে এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেছে। তিনি উচ্ছেদের জন্য প্রকৃয়া চালিয়েছেন। আর ভিকটিমের পরিবারকে উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে আর্থিক অনুদানের উদ্যোগ নেবেন বলেও জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, গত ২২ জানুয়ারি আজিজুল হকের ভবনে কাজ করতে গিয়ে রিটন মিয়া নামে এক নির্মাণ শ্রমিক অরক্ষিত বিদ্যুৎ লাইনে মারাত্মক স্পৃষ্ট হলে ঢাকার শেখ হাসিনা বার্ণ ইনস্টিটিউট হাসপাতালে ভর্তির পর তার দু’টি হাত কেটে ফেলা হয়েছে। তাকে ভবন মালিক আজিজুল হক উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মধ্যস্থতায় তিন কিস্তিতে সাড়ে ৪ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়েছেন। গত ১৭ আগস্ট একই ভবনে এক এনজিও অফিসে পানের বরজের শ্রমিক শফিকুল ইসলামের স্ত্রী পারভীনা আক্তার তার মেয়ে হাফিজাকে (৬) নিয়ে গিয়েছিলেন ঋণের কিস্তি দেবার জন্য। বিকাল পৌনে ৫টার দিকে মেয়েটি সবার অগোচরে ছাদে গিয়ে বিদ্যুৎ লাইনে হাত দিতেই মারাত্মকভাবে স্পৃষ্ট হয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। দুই হাত ও দুই পা ঝলসে যায়। তাকে জেলা সদরের জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য শেখ হাসিনা বার্ণ ইনস্টিটিউট হাসপাতালে পাঠালে বাম হাতের ৪টি আঙ্গুল কেটে ফেলে দিতে হয়েছে। হাফিজা বর্তমানে হাসপাতালের ৯ম তলায় ৯০২ নম্বর ওয়ার্ডের ১৩ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন বলে জানিয়েছেন মা পারভীনা আক্তার।
মেয়েটির মামা মোহাম্মদ আলী উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে লেখা আবেদনের বলেছেন, মেয়েটির বাম হাতে চারটি আঙ্গুল কেটে ফেলা হয়েছে। ভবন মালিক মাত্র ১৬ হাজার টাকা দিয়েছেন। পরিবারের জমানো টাকাও শেষ। এখন আত্মীয়দের কাছ থেকে টাকা নিতে হচ্ছে। বর্তমানে চিকিৎসা খরচ এবং সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। চিকিৎসার জন্য আরও অনেক টাকার প্রয়োজন। কিন্তু ভবন মালিক আজিজুল আর কোন টাকা দিচ্ছেন না, খোঁজও নিচ্ছেন না। এ ব্যাপারে প্রতিবাদ করলে হুমকি দেয়া হয়। আইনগত ব্যবস্থা নিলে বা দরবার করলে দেখে নিবেন বলেও ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন বলে আবেদনে বলা হয়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাবেয়া পারভেজকে প্রশ্ন করলে তিনি এ প্রতিনিধির কাছে আবেদন পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে জানিয়েছেন, ভবনের মালিক নিজেই ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে পল্লীবিদ্যুতে চাকরি করেন। তার ভবনের নীচ তলায়ও পল্লীবিদ্যুতের অভিযোগ কেন্দ্রকে ভাড়া দিয়েছেন। তিনি ভবনটি করার সময় বারান্দাটি রাস্তার জায়গার ওপর নির্মাণ করেছেন। আর পল্লীবিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে লাগিয়ে নির্মাণ করেছেন। যে কারণে বার বার দুর্ঘটনা ঘটছে। তিনি উচ্ছেদের বিষয়ে উদ্যোগ নিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন। আর ভিকটিমের পরিবারকে উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে আর্থিক অনুদান দেয়ার কথা বিবেচনা করছেন বলেও জানিয়েছেন।
এদিকে ভবন মালিক আজিজুল হককে ভিকটিম পক্ষকে হুমকির বিষয়ে প্রশ্ন করলে অস্বীকার করে বলেন, তিনি ভিকটিম পরিবারকে ইউএনও’র কাছে না গিয়ে সামাজিকভাবে বিষয়টি মিমাংশার কথা বলেছিলেন। তার ভবনের কিছু অংশ সরকারি রাস্তায় গিয়ে থাকতে পারে জানিয়ে বলেন, অনেকেরই এরকম সরকারি জায়গায় স্থাপনা আছে। এখন মাপজোখ করে কিছু অংশ সরকারি জায়গা পেলে ভাংতেই পারে। তিনি জানান, ইউএনও আজ ৯ অক্টোবর রোববার দুপুরে লোক পাঠিয়েছিলে যেন ভবনের মালামাল সরিয়ে নিয়ে যাই। একজন ম্যাজিস্ট্রেটও আমার ভবন সরকারি জায়গায় নির্মাণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন।