কিশোরগঞ্জ বাস টার্মিনালে হামলার ঘটনায় দু’পক্ষের পাল্টাপাল্টি মামলা দায়ের


admin প্রকাশের সময় : ডিসেম্বর ২১, ২০২২, ৫:০৪ পূর্বাহ্ন /
কিশোরগঞ্জ বাস টার্মিনালে হামলার ঘটনায় দু’পক্ষের পাল্টাপাল্টি মামলা দায়ের

# নিজস্ব প্রতিবেদক :-
১৯ ডিসেম্বর সোমবার বিকালে কিশোরগঞ্জ শহরের গাইটাল আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে শ্রমিক নেতাদের ওপর হামলার ঘটনায় দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি মামলা হয়েছে। সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ দাউদ জানিয়েছেন, ২০ ডিসেম্বর মঙ্গলবার সকালে জেলা মোটরযান শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম বাদী হয়ে একটি মামলা (মামলা নং ২৭) করেছেন। এর পরই যাতায়াত পরিবহন কোম্পানির চেয়ারম্যান মানিক সরকার বাদী হয়ে পাল্টা আরও একটি মামলা (মামলা নং ২৯) করেছেন।
আব্দুল কাইয়ুমের মামলায় মামুন, কাঞ্চন, বাবুসহ ৭ জনের নামোল্লেখ করে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে ১৪-১৫ জনকে। আর মানিক সরকারের মামলায় শফিকুল ইসলাম মানিক, রনি ও রবিনসহ অজ্ঞাত ১৫-২০ জনকে আসামি করা হয়েছে। হামলা ও চাঁদাবাজির ধারায় এসব মামলা হয়েছে বলে ওসি মোহাম্মদ দাউদ জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, যাতায়াত পরিবহন কোম্পনির কয়েকজন সদস্য মানিক সরকারের কাছে জিপিসহ (সাধারণ তহবিল) ১৫ লাখ টাকা পাবেন বলে জানিয়েছেন জেলা পরিবহন মালিক সমিতির আহবায়ক হেলাল উদ্দিন মানিক। এই টাকা পরিশোধ না করায় গত ১ ডিসেম্বর থেকে মানিক সরকারের ২০টি বাস পাওনাদাররা বন্ধ করে দিয়েছেন। তবে যাতায়াত কোম্পানির অন্য মালিকদের ২০টি বাস চলাচল করছে। ফলে জোর করে বাস চালানোর জন্য সোমবার বিকাল ৩টার দিকে মানিক সরকারের লোকজন টার্মিনালে হামলা চালিয়ে মোটরযান শ্রমিক ইউনিয়ন সভাপতি কাইয়ুমসহ অন্তত ৪ জনকে আহত করে। এসময় পুলিশ ১১ রাউন্ড ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। হামলার প্রতিবাদে বাস ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়েছিল। অবশেষে পুলিশ, মালিক ও শ্রমিক পক্ষের যৌথ সভায় সিদ্ধান্ত নিয়ে ২০ ডিসেম্বর মঙ্গলবার ভোর ৫টা থেকে বাস চলাচল শুরু করা হয়। টার্মিনালে গিয়ে যাত্রীদের যাতায়াত বাসের কাউন্টারসহ বিভিন্ন বাস কাউন্টারে টিকেট কিনে বাসে উঠতে দেখা গেছে। টার্মিনাল থেকে ৬টি রুটে দৈনিক ৩০০ বাস চলাচল করে বলে জেলা মোটরযান শ্রমিক ইউনিয়ন সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম জানিয়েছেন।
এদিকে মানিক সরকার জানিয়েছেন, তার লোকজন টার্মিনালে হামলা করতে যাননি। বরং তার বাস কাউন্টারের দায়িত্বে থাকা কাঞ্চন এবং মামুনের শরীরে মোটরযান শ্রমিক ইউনিয়ন সভাপতি কাইয়ুমের লোকেরা দা দিয়ে কোপ দিয়েছেন। তারা হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। আরও অন্তত ৬ জনকে আহত করা হয়েছে। তবে মোটরযান শ্রমিক ইউনিয়ন সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম এ অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন। এদিকে অন্য মালিকদের টাকা পাওনার কথা নাকচ করে মানিক সরকার বলেন, তার কাছে বর্তমান জেলা পরিবহন মালিক সমিতির সদস্য শফিকুল ইসলাম মানিক দাবি করেছিলেন, গত ২৫ নভেম্বর তাকে নগদ ৫ লাখ টাকা দিতে হবে। আর মাসে মাসে একলাখ টাকা করে দিতে হবে। এসব টাকা না দেওয়ার কারণেই মূলত ১ ডিসেম্বর থেকে মানিক সরকারের সব বাস বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বলে তিনি পাল্টা অভিযোগ করেন।
এদিকে জেলা পরিবহন মালিক সমিতির আহবায়ক হেলাল উদ্দিন মানিক এ বক্তব্য ভিত্তিহীন আখ্যা দিয়ে বলেন, মানিক সরকারের কোম্পানিতে শফিকুল ইসলাম মানিককে ১৫০ টাকার স্ট্যাম্পে লিখিতভাবে আরও অন্তত তিন বছর আগে পরিচালক নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। চুক্তি ছিল, পরিচালক হিসেবে তাকে মাসে ৫০ হাজার টাকা পারিশ্রমিক দেয়া হবে। কিন্তু মানিক সরকার গত ১৫ মাস ধরে কোন টাকা দেননি। ফলে শফিকুল ইসলাম মানিকের সাড়ে ৭ লাখ টাকা পাওনা হয়েছে। তার পরও মালিক সমিতি দরবার করে সিদ্ধান্ত দিয়েছিল, সাড়ে ৭ লাখ টাকার স্থলে কেবল দুই লাখ টাকা থোক প্রদান এবং মাসে ৩০ হাজার টাকা করে পারিশ্রমিক দেয়ার জন্য। সেটাও মানিক সরকার দিতে রাজি নন। এর জবাবে মানিক সরকার বলেন, শফিকুল ইসলাম মানিককে আরও দুই বছর আগেই পরিচালক পদ থেকে বাদ দিয়েছি। তবে বাদ দেয়ার বিষয়ে কোন লিখিত নেই বলে মানিক সরকার স্বীকার করেছেন। এদিকে টার্মিনালের আইন শৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে বলে ওসি মোহাম্মদ দাউদ জানিয়েছেন। এদিকে একটি সূত্র জানিয়েছে, কিশোরগঞ্জের পরিবহন সেক্টরের দুই পক্ষে বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের দু’টি প্রভাবশালী গ্রুপ কাজ করছে।