# নিজস্ব প্রতিবেদক :-
বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে শিল্প ও সংস্কৃতি উৎসব নিয়ে সংবাদ সম্মেলন হয়েছে। ১৩ মার্চ সোমবার বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সেমিনার হলে এ সংবাদ সম্মেলন হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন, নেপালের ডেপুটি হেড অফ মিশন ললিতা সিলওয়াল প্রমুখ।
দক্ষিণ এশিয়ার শান্তিপ্রিয় দেশ হিমালয় কন্যা নেপাল। নেপাল বহু জাতির, বহুসংস্কৃতি ও বহুভাষার একটি দেশ। বাংলাদেশ ও নেপাল ঐতিহাসিক, ভাষাগত সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সম্পর্কের বন্ধনে আবদ্ধ। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে নেপালের রাজনৈতিক নেতা এবং জনগণ যে নৈতিক ও বৈষয়িক সমর্থন দিয়েছিল তা বাংলাদেশের জনগণ গভীর কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করে। স্বাধীনতার পর যে সব দেশ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছিল তাদের মধ্যে নেপাল অন্যতম। দুই দেশের মধ্যে আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয় ১৯৭২ সালের ৮ এপ্রিল।
নেপাল সপ্তম দেশ যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরপরই ১৯৭২ সালের ১৬ জানুয়ারি বাংলাদেশকে স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পর থেকে নেপাল ও বাংলাদেশের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক পারস্পারিক সম্প্রীতি, সৌহার্দ্যা, বোঝাপড়া এবং জনগণের অভিন্ন মূল্যবোধ ও আকাঙ্খা দ্বারা চিহ্নিত। নেপাল ও বাংলাদেশ অভিন্ন স্বার্থের বিভিন্ন ইস্যুতে সহমত পোষণ করে এবং জাতিসংঘ, ন্যাম, সার্ক এবং বিমসটেকসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ফোরামে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বিভিন্ন পর্যায়ে সফ বিনিময় দুই প্রতিবেশীর মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ককে সুসংহত করেছে।
বাংলাদেশের প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল কলেজ ও অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নেপালি শিক্ষার্থী শিক্ষা অর্জন করছে। এছাড়া প্রতি বছর শত শত নেপালি শিক্ষার্থী বাংলাদেশে নার্সিং, ডেন্টিস্ট্রি, ইঞ্জিনিয়ারিং এবং অন্যান্য কোর্সে পড়তে আসে। বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন শহরে চার হাজারের বেশি নেপালি শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষায় নিয়োজিত রয়েছে।
নেপাল ও বাংলাদেশ উভয় দেশেই অসংখ্য পর্যটন স্পট রয়েছে। দু’দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঐতিহাসিক ও প্রতœতাত্তি¡ক স্থান, সমৃদ্ধ সভ্যতা, সংস্কৃতি-ঐতিহ্য, জীব-বৈচিত্র্য সবই সারা বিশ্বের পর্যটকদের আকর্ষণ করে। প্রতিবেশী হিসেবে দু’দেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগ আরও বিস্তৃত করার সুযোগ রয়েছে। নেপাল সরকার ‘সুখী নেপাল, সমৃদ্ধ নেপাল কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। অন্যদিকে, বাংলাদেশ সরকার রূপকল্প ২০৪১ নির্ধারণপূর্বক ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করছে। এই প্রেক্ষাপটে দুদেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও জোরদারের সম্ভাবনা ব্যাপক।
বাংলাদেশ ও নেপাল বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র। শুধু ভৌগলিকভাবে নিকটবর্তী হিসেবেই নয়, দু’দেশের মধ্যে বিদ্যমান অভিন্ন সংস্কৃতি, পারস্পরিক বিশ্বাস, খাদ্যভ্যাস, সামাজিক প্রথা ও আচার-অনুষ্ঠান আমাদেরকে একে অপরের কাছে এনেছে। দীর্ঘদিন ধরে এক দেশ আরেক দেশকে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইস্যুতে বাংলাদেশকে সমর্থন ও সহযোগিতা দিয়ে আসছে।
২০১৯ সালে বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ রাষ্ট্রীয় সফরে নেপাল ঘুরে এসেছেন। নেপালের মহামান্য রাষ্ট্রপতি বিদ্যা দেবী ভান্ডারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং সাধারণ সম্পর্কে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে গত ২০২১ সালে ২২ মার্চ রাষ্ট্রীয় সফরে বাংলাদেশে আসেন। সফরকালে বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে পর্যটন সহযোগিতা ও সাংস্কৃতিক বিনিময় কর্মসূচীসহ চারটি চুক্তি সই হয়। এ সফর আবহমান সাংস্কৃতিক ও ভৌগোলিক নৈকট্যের ভিত্তির ওপর রচিত বন্ধুত্বপূর্ণ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আরও বেগবান ও জোরদার করেছে।
১৯৭৮ সালের ১৪ জানুয়ারি নেপালের সঙ্গে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক সহযোগিতা চুক্তি হয় এবং বর্তমানে ২০২২-২০২৫ মেয়াদে সাংস্কৃতিক বিনিময় কর্মসূচী চালু রয়েছে। দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সহযোগিতায়, নেপাল দূতাবাস ঢাকা ও বাংলাদেশ নেপাল ফ্রেন্ডশিপ সোসাইটি আয়োজন করেছে শিল্প ও সংস্কৃতি উৎসব। আমরা বাস্তবিক অর্থেই দুই দেশের মধ্যে যৌথ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনসহ সাংস্কৃতিক বিনিময় বাড়াতে পারি। দু’দেশের শিল্পী, সাহিত্যিক ও সংস্কৃতিকর্মীদের পরস্পরিক ভ্রমণ ও পরিদর্শন বৃদ্ধির মাধ্যমে দু’দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময় নতুন মাত্রা পাবে।
উল্লেখ্য, দু’দেশের শিল্প সংস্কৃতি, সাহিত্য বিনিময়ের উদ্দেশ্যে ২০১৬ সালে বাংলাদেশ নেপাল ফ্রেন্ডশিপ সোসাইটি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠা পরবর্তী সময় থেকে এই সংগঠন দুই দেশের সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিনিময়ে কাজ করে যাচ্ছে। বিশেষ করে দুদেশের সাহিত্য কর্ম অনুবাদ, সাহিত্য সম্মেলন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন উল্লেখযোগ্য।
আপনার মতামত লিখুন :